বিরামপুরের মেরিনা বেসরা পেলেন শ্রেষ্ঠ অদম্য নারী সম্মাননা পুরুষ্কার


manobota television প্রকাশের সময় : মার্চ ৯, ২০২৫, ১০:২০ অপরাহ্ন /
বিরামপুরের মেরিনা বেসরা পেলেন শ্রেষ্ঠ অদম্য নারী সম্মাননা পুরুষ্কার



রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে শ্রেষ্ঠ ছয়জন ‘অদম্য নারী’র হাতে সম্মাননা পুরস্কার তুলে দিয়েছেন বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। তাদের মধ্যে জাতীয় পর্যায়ে সফল জননী নারী ক্যাটাগরিতে অদম্য নারী পুরস্কার -২০২৫ পেয়েছেন দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার মেরিনা বেসরা।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ এনডিসি এর পরিচালনায় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে শ্রেষ্ঠ ছয়জন সম্মাননা পুরস্কার পাওয়া অদম্য নারীরা হলেন- অর্থনীতিতে অবদানে শরিফা সুলতানা, শিক্ষা ও চাকরিতে অবদানে হালিমা বেগম, সফল জননী নারী মেরিনা বেসরা, জীবন সংগ্রামে জয়ী নারী লিপি বেগম, সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদানে মো. মুহিন (মোহনা), বিশেষ বিবেচনায় বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দল।
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার আদিবাসী সম্প্রদায়ের অদম্য নারী মেরিনা বেসরা। তার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে সফল জননী ক্যাটাগরিতে আজ অদম্য নারী হিসেবে জাতীয় শ্রেষ্ঠ সম্মাননা পুরস্কার পেয়েছেন।
তিনি দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার হাবড়া ইউনিয়নের ভবানীপুর আমাইল পাড়া গ্রামের সম বেসরার সবার ছোট কন্যা সন্তান।
বাবা মায়ের বাড়ীতে ৫ ভাইবোনের মধ্যে অতি আদরের ছোট সন্তান ছিলেন মেরিনা বেসরা।হেসে খেলে জীবন পার করছিলেন তিনি। কিন্তু দেশ স্বাধীন হবার দু’বছর পর তার বিয়ে দিয়ে দেয় তার পরিবার।বিয়ের পর শুরু হয় তার ছিন্ন এক জীবন। দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার বিনাইল ইউনিয়নের দেশমা গ্রামের মার্কস মুরমু’র সাথে তার বিয়ে হয়। স্বামী পেশায় ছিলেন একজন রাজমিস্ত্রী।স্বামীর আবাদী জমি ছিল না। শুধু ছিল- একটি কুড়ে ঘর। সারাদিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনী কাজ করে পারিশ্রমিক পেত ৪০-৫০ টাকা। যা দিয়ে কোনমতে সংসার চালাতেন।
মেরিনা বেসরা বলেন, সৃষ্টিকর্তার আর্শীবাদে আমাদের কোলজুড়ে তিন জন পুত্র সন্তান জন্মগ্রহন করে। আমাদের বড় ছেলে মাবিয়াস মুরমু, মেজো ছেলে মানুজেল মুরমু আর সবচেয়ে ছোট ছেলে শামুয়েল মুরমু। আমাদের অভাবের সংসারে এই তিনপুত্র যেন তিন রাজপুত্র। গ্রামের স্কুলে পড়াশুনা, খেলাধুলা, আচার-আচরন সবদিক দিয়েই তারা সকলের মন জয় করেছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো আমার এবং আমার স্বামীর প্রবল ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও ছেলেদের পড়াশুনার খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল। কষ্টে বুক ফেটে যেত যখন বাচ্চাদের মুখে ভাল খাবার দিতে পারতাম না। আর পোশাক-আশাকের কথা না হয় বাদই দিলাম।
আমাদের ছেলেদের পড়াশুনার আগ্রহ ও মেধা দেখে আমার বড় ছেলে মাথিয়াস মুরমু ১৯৯০ সালে ধানজুড়ী মিশনে হোস্টেলে থেকে পড়াশোনার সুযোগ পায়।বর্তমানে মাথিয়াস ৫০ নম্বর ব্যাটেলিয়ন বি.জি.বি তে হাবিলদার পদে কর্মরত আছে। আমাদের ছেলের কৃতিত্বে আমাদের সন্মান বৃদ্ধি পায়। যা খুবই আনন্দের ছিল।
আমাদের মেজো ছেলে মানুয়েল মুরমু ২০০২ সালে এসএসসি পাশ করে কারিগরি প্রশিক্ষনের জন্য নারিন্দা ঢাকা তে যায়। সে ওয়েল্ডিং এর উপর প্রশিক্ষণ গ্রহন করে বর্তমানে এনার্জী কোম্পানী, ঢাকা’তে কাজ করছে।
আমাদের ছোট ছেলে শামূয়েল মুরমু। সে দিনাজপুর সরকারী কলেজ থেকে ইংরেজীতে অনার্স পাশ করে। পরবর্তীতে ৩২ তম স্পেশাল বিসিএস এ উত্তীর্ণ হওয়ার পর ২০১২ সালের দিকে ইংলিশ লেকচারার হিসেবে হাজী মোঃ মহসীন কলেজ, পাঁচবিবি’তে চাকুরী পায়। লেকচারার হিসেবে সে সময় মোট ৬৪ জন কৃতকার্য হয়েছিল তারমধ্যে আমাদের ছোট ছেলে শ্যামুয়েল মুরমু চতুর্থ (৪র্থ) স্থান অধিকার করেছিল পুরো বাংলাদেশে। এরপর সে ৩৩ তম বিসিএস এ উত্তীর্ণ হয় এবং ২০১৩ সালে সহকারী সচিব পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়, ঢাকায় যোগদান করে। ২০১৯ এ সে সাউথ কোরিয়া সিউল এ সিনিয়র সহকারী সচিব পদে যোগদান করে। বর্তমানে স্ব-স্ত্রীক সে সিউল এ কাজ করছে। তার স্ত্রী রিসপী সরেন, সে ৩৩ তম বিসিএস এ উত্তীর্ণ হয়ে রাজস্ব বিভাগে সহকারী কমিশনার হিসেবে যোগদান করেন।
এই কথাগুলো বলতে বলতে তার অশ্রুসিক্ত হয়ে যায়। তিনি বলেন এখন আমাদের আর অভাব নেই। আমাদের তিন রত্ন আমাদের কষ্টের দিন মুছে ফেলেছে। আমাদের কোন জমি ছিল না। এখন তিন বিঘা ধানী জমি হয়েছে। পাকা বাড়ী হয়েছে। সারা বছর খাবারের কোন অভাব আর নেই। বরং কত মানুষ এসে আমাদের বাসায় এখন থেকে যায়,খেয়ে যায় যা একটা সময় স্বপ্নের মত ছিল।
আশেপাশের মানুষও আমাদের এখন চিনে আমাদের ছেলেদের পরিচয়ে। আমার স্বামী ২ মার্চ, ২০২৩ সালে পরলোক গমন করেছেন। সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ আমার স্বামী ছেলেদের সফলতাগুলো নিজ চোখে দেখে গিয়েছে। আমি এখন আর একা অনুভব করি না। আমার নাতি নাতনী নিয়ে আমি আনন্দে দিন পার করছি আর সৃষ্টিকর্তাকে মনোপ্রান ভরে ধন্যবাদ দেই আমার ছেলেদের জন্য। এখন আমার ছেলেদের নামেই আমাকে আর আমার আত্মীয়-স্বজন গ্রামবাসীকে সবাই চেনে। একজন মা হিসেবে এর থেকে আনন্দের আর গর্বের কি হতে পারে। আমি সবসময় দোয়া প্রার্থনা করি আমার ছেলেরা ও নাতি নাতনীরা বউ মায়েরা যেন সুস্থ থাকে আর দেশ ও দশের সেবা করে যেতে পারে।
বিরামপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোশাররত জাহান বলেন, গতবছর ৯ ডিসেম্বর মেরিনা বেসরা সফল জননী ক্যাটাগরিতে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ নির্বাচিত হন। এবছর ২৮ জানুয়ারি বিভাগীয় পর্যায়ে সফল জননী ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় শ্রেষ্ঠ অদম্য নারীদের মধ্যে সফল জননী ক্যাটাগরিতে মেরিনা বেসরা নির্বাচিত হওয়ায় মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ‘অদম্য নারী’ সম্মাননা পুরস্কার-২০২৫ তাঁর হাতে তুলে দিয়েছেন । মেরিনা বেসরার এ অর্জনে বিরামপুরবাসী গর